লকডাউন
২২শে মার্চ। লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মস্ত তালা পড়েছিল মনের দরজায়। যাব্বাবা? আটকে গেলাম? এ আবার কি? এতোখানি বয়স হল এরকম আজব ব্যাপার তো কখনও ঘটতে দেখিনি। আসমুদ্র হিমাচল থমকে গেল গো-স্ট্যাচু খেলার ভঙ্গিমায়। এতোদিনের চেনা পৃথিবীকে বড় অচেনা লাগছে। বিশ্বব্যপী করোনার করাল ছায়ায় সন্দেহের মেঘ ঘনিয়ে উঠেছে মনের মধ্যে। বিশ্ব জুড়ে শুধু মৃত্যুমিছিল। সেই ভিড়ে মিশে গেল ভারতবর্ষ।
ইতিমধ্যে গৃহবন্দী এই অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেও গেলাম দিব্যি। খানিকটা অভ্যস্তই হয়ে গেছি একদম বাইরে না বেড়িয়ে একটানা ঘরে থাকতে। খুব অসুবিধা কিছু বোধ করি না। তবে সত্যি বলতে কি, মনের একদম ভেতর থেকে ভালো নেই। খুব অপরাধবোধে ভুগছি। আমার তো তাও দুমুঠো জুটে যায় ঠিক। একপেট খিদে নিয়ে শ্রান্ত ক্লান্ত শ্রমিকের দল মাইলের পর মাইল হেঁটে যাচ্ছে শুধু ঘরে ফিরবার তাগিদে, আপনজনের কাছে পৌঁছবার আশায়। ইন্ডিয়া আজ হোম-কোয়ারেন্টিনে আর ভারতবর্ষ পথে হাঁটছে।
লকডাউন শুরুর একদম প্রথম দিকে দেখছিলাম একটু একটু করে পৃথিবীর রং কেমন বদলে গেল। যে শহর কখনও ঘুমোয় না, অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাত জাগে দিনের পর দিন সেই কেমন ঘুমন্ত রাজকন্যা হয়ে গেল নিমেষে। শতশত সোনার কাঠি, রূপোর কাঠির ছোঁয়াতেও তার ঘুম আর ভাঙ্গে না। আলোর রং আরও ঊজ্জ্বল হয়েছে, গাছেরাও আরও প্রাণবন্ত। তবে ধীরে ধীরে আবার সচল হয়ে উঠছে আমার জনপদ সরকার বাহাদুরের মর্জিমাফিক। তবে এই মারণ ভাইরাস আমাদের মনে সন্দেহের যে বীজ বুনে দিল তা থেকে আর মুক্তি নেই। পাশের মানুষটিকেও দেখি আজ সন্দেহের চোখে। আসলে আতঙ্কে নীল হয়ে আছি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায়। তবে আশা করছি খুব থেমে যাক এই মৃত্যু আবহ। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক পৃথিবী, উধাও হোক মৃত্যুভয়। জীবন ফিরুক সুষ্ঠ ছন্দে। করোনা আতঙ্ক আমাদের শরীরগুলোকে গৃহবন্দী করলেও মনের ডানা ছেঁটে ফেলতে পারেনি কোনভাবেই – হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি মন বান্ধিবি কেমনে?