বেঁচে ওঠার লকডাউন


বেঁচে ওঠার লকডাউন

প্রতিদিনই শুতে শুতে ভোর হয়। পাখিদের আওয়াজ, কালো কাটা জানলার বাইরের দৃশ্য আর কয়েক ঢোখ জল খেয়েই শুতে যাই। লকডাউনেও এই রুটিনের বদল হয়নি তেমন। লকডাউনের দৈর্ঘ্য বেড়ে চলা, বাড়িবন্দি দশার যন্ত্রণা, মাপা জীবনচর্চা, ভালবাসার মানুষদের অদেখার অনন্তকাল যাপন- সব মিলিয়ে হতাশা, বরক্তি, মনখারাপ, একগাদা দুশ্চিন্তা নিয়ে যখন লকডাউনের প্রায় দেড়টা মাস অতিক্রম করে ফেললাম, এমন দিনে মন ভালো করে দেয় নিস্তব্ধ রাস্তাঘাট, মাঝরাতে কোকিলের ডাক, সারা সকাল জুড়ে শালিখ, চড়ুই- এর কিচির মিচির, একপশলা বৃষ্টি পড়লেই ছোটবেলার কবিতায় পড়া ব্যাঙের গ্যাঙর গ্যাঙর ডাক, রাস্তার ধারের ফুটপাথগুলোয় পেতে রাখা পাথরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া সবুজ ঘাস-চারারা। গোটা শীতে ধুলো জমা গাছের দিকে তাকিয়ে এখন আর মন খারাপ করেনা, বরং গ্রীষ্মের এমন দিনেও শহর কোলকাতায় যেন সবুজের মেলা বসেছে। পাড়ার অলি গলি থেকে বড় রাস্তার দুধারে জমছে না প্লাস্তিকের স্তূপ, দম আটকে আসা গাড়ীর ধোঁয়া ছেড়ে হুস করে এগিয়ে যাওয়া ব্যস্ততার চোখ রাঙানী হঠাৎ কেমন ম্লান হয়ে গেছে। বৈশাখের প্রখর দুপুরের দরদর করে গড়িয়ে পড়া ঘামের চিটচিটে অস্বস্তি এবার আমাদের কাবু করতে পারেনি। অফিস যাওয়ার ঝক্কি সামলাতে গিয়ে একে অপরের মুখ, গলার আওয়াজ ভুলতে বসার আগেই লকডাউন আমাদের সামাজিক করে তুলেছে। আমরা এখন জানলা, বারান্দা, ছাদের পাঁচিলে উঁকি দিয়ে পাশের বাড়ির খবর নিচ্ছি, ফোন-ভিডিও কলে একটু কাছের হতে চাইছি, বাড়ি বসে সময় কাটাতে কিম্বা বাইরের খাবারের ঝোঁক মেটাতে আমরা কেমনপাকা রাঁধুনিহয়ে উঠছি। 
কোরনার ভয়বহতা, পৃথিবী জোড়া মৃত্যু মিছিল, এত এত হারিয়ে ফেলার মাঝেও আমরা কেমন রঙিন হয়ে উঠছি। আমরা যেন একটু করে বেঁচে উঠছি। সেরে ওঠো পৃথিবী, চলো আমরা সবাই এক সাথে ভালো থাকি।


পিয়ালী হালদার